১) বাবা-মার একমাত্র ছেলে ইভান।বাবাঅনেক বড় শিল্পপতী, দুহাতে টাকা কামান।মা গৃহিনী সারাক্ষন স্বামী-সন্তানের ভাল মন্দের দেখভাল করা নিয়েব্যস্ত।ছেলের জীবনের কোন চাওয়া পাওয়াই অপূর্ণ রাখেনি তার বাবা-মা।বন্ধুবান্ধবদের সাথে যখন খুশি যেখানে চলে যাওয়ার অনুমতি আছে ইভানের।পূর্ন স্বাধীনতা দিয়েছেন তারবাবা তাকে, যদিও মমতাময়ি মা মাঝে মাঝেশাসন করতে চায় কিন্তু স্বামীর বাধার কারনে সেটা করতে পারেন না।২৩ বছরের এই বয়সে জীবনের সব ধরনের আনন্দ,বিলাসীতা উপভোগ করেছে সে।সুখেই চলছিল তাদের সংসার,কিন্তু হঠাত করেই যেন সেই সুখের সংসারে নেমেএলো শোকের ছায়া।বাবা মার একমাত্র সন্তানটি আত্মহত্যা করেছে সাথে লিখে গেছে একটি চিরকুটে যাতে লেখা"জীবনটাকে খুব পানসে লাগছিল,কোন কিছুতেই মজা পাচ্ছিলাম না।তাই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলাম।আমার মৃত্যুর জন্যে কেও দায়ী নয়।" উল্লেখ্য মৃত্যুর কিছুদিন আগে তার মালক্ষ্য করেছে সারাক্ষন কেমন যেন একটাবিষন্ন মন নিয়ে বসে থাকতো ইভান।বন্ধুদের সাথে আড্ডাতে যেত না,নাইট-ক্লাবে যেত না,এমনকি মাস-দুয়েক আগে নতুন পরিচয় হওয়া পাশেরফ্ল্যাটের সিনথির সাথেও কথা বলত অনিহা নিয়ে।মৃত্যুর কিছুদিন আগে বন্ধুরা খেয়াল করেছে নেশা করেও কেমন যেন আর মজা পাচ্ছে না সে,কিংবা নতুন কোন শিকার নিয়ে রেডিসনে রাত কাটাতেও তার মাঝে কোন আগ্রহ দেখা যেতো না।
২) ভার্সিটির মেধাবী ছাত্রী সুমি।এক ভাই এক বোন।বাবা ইঞ্জিনিয়ার মা ডাক্তার,বড় ভাই সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিংপাশ করে বাহিরে গেছে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে।নম্র আর ভদ্র মেয়ে হিসেবে বন্ধুমহলে তার সুখ্যাতি আছে।গোলগাল মুখটাতে চোখে সবসময় কালো ফ্রেমের চশমা ব্যবহার করে।বন্ধুদের সাথে আড্ডার সময় কথা খুব কম বলে।সবাই তার কাছ থেকে স্যারের ক্লাশ লেকচার সংগ্রহ করে আর সেও সবাইকে খুশি মনেই সরবরাহ করে।সবসময় হাসি-খুশি থাকে মেয়েটি।কিন্তু ইদানিং কেমন যেন মনমরা হয়ে বসে থাকে সে।ক্লাশ ঠিকমত করে না,মুখের সেই প্রানবন্ত হাসিটাও এখন আর দেখা যায় না।পড়াশুনা ঠিকমত নাকরার দরুন গত পরীক্ষাতেও অনেক খারাপ করেছে।কিছুদিন আগে যার সাথে তার সম্পর্ক ছিল সেটা ব্রেকআপ হয়ে গেছে।ওর সবচাইতে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী রুপা এসে ওকে স্বান্তনা দিচ্ছে একজন পলাশ গিয়েছে তো কি হয়েছে হাজারটা পলাশ তোর জন্যে পাগল হয়ে ছুটে আসবে।তুই মনমরা হয়ে বসে থাকিসনে, এভাবে পড়াশুনার ক্ষতি করে নিজের কেরিয়ারটা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিস না।
৩) মুহিত, সবে মাত্র ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে।ও যে কলেজথেকে এসেছে সেই কলেজের ও ছিল ফার্ষ্টবয়।অত্যন্ত খেলা পাগল আর চরম দুরন্ত ছেলে মুহিত।সব সময় বন্ধুদের আড্ডা মাতিয়ে রাখত সে।ভর্তি পরীক্ষায় কোন কারনে খারাপ হওয়ার তার আশানুরুপ ভার্সিটিতে সে চান্স পায়নি।আর তাই এখন বন্ধুদের আড্ডাতে সেই আগের মুহিতকে খুজে পায় না তার বন্ধুরা।সারাক্ষন মনমরা হয়ে থাকে ক্লাশও ঠিকমত করে না সে।
৪) মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে মুনিম।দুই বোন দুই ভাইয়ের মাঝে সবার ছোট সে।বাবা আদর্শ স্কুল শিক্ষক মা গৃহিনী।বাবা অনেক কষ্টে চার ভাই বোনকেই মানুষ করার দ্বায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।মফস্বল শহর থেকে প্রথম ঢাকা এসেছে, ঢাকা ভার্সিটিতে ম্যাথ এ ভর্তি হয়েছে।নাস্তিক ধর্ম গ্রহন করেছে ছয় মাস হল।বেশ স্বাধীন আর মুক্ত মনে হয় নিজেকে এখন।ভালই যাচ্ছিল দিনগুলো, কিন্তু ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাসেল মারা যাওয়ার পর থেকে কেমন জানি মন মরা থাকে সে।নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে, "আমার এমন হচ্ছে কেন ?? আমি না কমরেড, মানুষের মৃত্যু মানেইতো একটি matter এর রুপান্তর আরেক matter এ।এটাই প্রকৃতির নিয়ম, তাহলে আমার খারাপ লাগছে কেন ?? আর মানুষের অনুভূতি,চিন্তা এগুলোতো reflection of matter ।আর মানুষ চাইলেই এগুলোকে shape দিতে পারে। তাহলে আমার এমন হচ্ছে কেন ?? আমি কি তবে কমরেড হতে পারি নি।মৃত্যুই যদি এই সত্যার শেষ হয় তবে কি প্রাপ্তি কমরেডের জীবনে ??..
৫) আসাদ সাহেব, উনি একজন সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।দুই মেয়ে এক ছেলে,সবাই ভার্সিটিতে পড়াশুনা করে।স্ত্রী রাহেলা বেগম বেসরকারী একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন।দুজনের ইনকামে মোটামুটি চলে যাচ্ছে সংসার।ইদানিং আসাদ সাহেবের যে কি হয়েছে কেমন যেন বিষন্ন হয়ে যান মাঝে মাঝে।রাহেলা বেগম খেয়াল করেছেন ব্যাপারটা,তাই নির্জনে একদিন জিজ্ঞাসা করেছেন স্বামীকে তার কি হয়েছে,আসাদ সাহেব কিছু হয়নি বলে এড়িয়ে গেছেন।আসলে ইদানিং আসাদ সাহেব নিজের সাথে একা একা কথা বলেন,"কি চেয়েছি জীবনে, কি পেয়েছি ? প্রতিদিন একই কাজ, সেই সকালে অফিসে যাওয়া অফিস থেকে বাসায় ফেরা,বাজারে গিয়ে বাজার করা,দিন শেষে ঘুমিয়ে পড়া।পরদিন সকালেউঠে সেই একি রুটিন যেন একটা লোপের মাঝে আমি,লাইফটা একদম একঘেয়ে লাগে এখন।"
৬) অত্যন্ত নম্র আর ভদ্র ছেলে মুসফিক।পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, আর ধার্মিক ছেলে হিসেবে মহল্লার সবাই একনামে চেনে তাকে।যে কারো প্রয়োজনের সময় ডাকলে তাকে পাওয়া যায়।বিয়ে করেছেন খালাতো বোন আনিকাকে বছরখানেক হল।আনিকা প্রথম থেকেই হিজাব পালন করেআসলেও ধর্মের প্রতি তেমন একটা মনযোগীছিলেন না। তবে মুসফিকের সংস্পর্শে এইএক বছরে অনেক মনযোগী হয়েছে।আনিকার মনমানুষিকতার আমূল পরিবর্তন আসার পর তার মনে হল স্বামীকে একটা বিষয় জানানো প্রয়োজন যেটা সে আগে জানায়নি ভিন্ন মন-মানুষিকতার কারনে।একদিন সেতার স্বামী মুসফিক কে জানায় বিয়ের আগে কলেজের একটা ছেলে জোড় পূর্বক তারশ্লীলতাহানী করে তবে এতে তার কোন দোষছিল না।এখন সে বুঝতে পেরেছে বিয়ের আগেই বিষয়টা তাকে জানানো উচিত ছিল যেটা আগে সে বলেনি সম্পর্কটা ভেঙ্গে যেতে পারে এই ভয়ে।মুসফিক স্ত্রীর মুখের দিকে চেয়ে আর তার পরিবর্তন দেখে বিষয়টা মেনে নিল।কিন্তু ঘটনাটা জানার পর থেকে সে কেমন জানি আর মনের ভেতর স্বস্থি পাচ্ছে না।কেমন জানি বিষন্ন হয়ে থাকে সারাদিন।
=================

উপরে বর্নিত ঘটনাগুলো আসলে আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার উদাহরনমাত্র।যদিও এখানে বর্ণিত প্রত্যেকটিচরিত্রই আমার নিজের কল্পনা থেকে তৈরীকরা তবে সত্যি বলতে কি আমরা যদি ভাল করে আমাদের চারপাশে একবার তাকিয়ে দেখি তবে এমন ঘটনা অহরহ ঘটতে দেখতে পাব এমনকি আরো অনেক রকমের।সবগুলো ঘটনার শেষ পরিনতি গিয়ে দাঁড়ায় বিষন্যতায় বা হতাশায় আর তার মাত্রা যদি তীব্রতর হয়ে পড়ে তখন আর কুলকিনারা না পেয়ে তার থেকে মুক্তির আশা নিয়ে অনেকেই আত্মাহুতীর পথ বেছে নেয়। মনোবিজ্ঞানীরা বিষন্যতা কাটানোর জন্যে অনেক ধরনের পরামর্শই দিয়ে থাকেন।দেশের বুদ্ধিজীবিরাও এগিয়ে আসেন বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ নিয়ে।বিষন্যতা কাটাতে কেও কেও পরামর্শ দেন গান শুনার, কেওবা বলেন দূরে কোথাও ঘুরে হাওয়া পরিবর্তন করারজন্যে, অনেকে হয়তো পরামর্শ দেন বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি সময় কাটাতে।আশ্চর্য বিষয় কি জানেন এরা সবাই কেবলএকটা টেম্পোরারী সমাধানের পথের কথাই বলে যান।তাদের দেখানো এই সমাধানগুলোর দ্বারা কিছুদিনের জন্যেতার বিষন্যতা দূর করা সম্ভব হলেও কিছুদিন পর যে আবার সেই বিষন্যতা তাকে গ্রাস করবে না সেই গ্যারান্টি কি ?? কিংবা এর মাঝে নতূন কোন বিষন্যতা যে তাকে এসে চেপে বসবে না সেই নিশ্চয়তা কে দিবে ?? বাস্তবতা আমাদের বলে এমনটাই ঘটে থাকে বেশীর ভাগের ক্ষেত্রে।মনে রাখা উচিত Structure এ চীড় ধরলে রঙ দিয়ে কেবল কিছুদিনের জন্যে তা ঢেকে রাখা যায় তবে Proper Treatment না করলে তা একসময় বিশাল আকার ধারন করে পুরো Structure কে ধসিয়ে দেয়। মজার ব্যাপার কি লক্ষ্য করেছেন এদের কেও মূল সমষ্যার দিকে আলোকপাত করেন না।বিষন্যতার জন্যে তারা কেবল বাহ্যিক কিছু ঘটনাকেই দায়ী করেন আর সেই আলোকে তার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেন।সমষ্যার root চিহ্নিত করতে ব্যার্থ হওয়ায় তাদের দেওয়া সমাধানটাও absolute & permanent কোন solution এ পৌছাতে পারে না।আরো মজার বিষয় লক্ষ্য করেছেন কিনা যে তারা কেবল তখনি সমাধান দেওয়ার চেষ্টাকরেন যখন সেই সমষ্যার উদ্ভব ঘটে।সমষার পূর্বেই প্রতিরোধমূলক কোনসমাধান তারা দেন না, আর যদিও বা দেন তা শুধু কিছু গদ-বাধা বুলির মতন, যেমনআমাদের মনকে সবসময় চাঙ্গা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, এর জন্যে প্রয়োজনীয় বিনোদনের ব্যবস্থা থাকতে হবে,সুস্থ বিনোদনের জন্যে সুস্থ সংস্কৃতি তৈরী করতে হবে আরো অনেক কিছু।এখেত্রেও দেখা যাচ্ছে তারা মূল বিষয়টা এড়িয়ে যান বা ধরতে পারেন না।এখানে মূল বিষয়টা যে মানুষের মনন বা চিন্তার মাঝে নিহিত আর সেটার গতি-প্রকৃতি কিভাবে তার জীবনকে কন্ট্রোল করে সেই বিষয়টাতে তাদের কোনভ্রুক্ষেপ নেই।তাই প্রতিকার বা প্রতিরোধ এর ক্ষেত্রে তাদের দেওয়া কোন পন্থাই perfect কোন solution দিতে সমর্থ হয় না
আসুন আমরা বিষয়গুলোর একটু গভীরে দেখার করার চেষ্টা করি।তবে এই ক্ষেত্রে বলে নেওয়া ভাল বিষন্যতা যেহেতু মন ঘটিত ব্যাপার তাই এর সমাধান খুজার জন্যে অবশ্যই আমাদেরকে মনের তথা মনকে যে নিয়ন্ত্রন করে চিন্তা, সেই দিকে Focus light টা ধরতেহবে।এবার আসুন দেখি মানুষের মন আসলে কি চায় বা কি দিলে সে শান্তি পায়।মানুষ আসলে নানাবিধ চিন্তা করতে ভালবাসে আর সেই সমস্ত চিন্তার শেষ প্রান্তে এসে যদি সে একটা সমাধান টানতে পারে তবেই তার মন শান্ত হয়।এর আগে পর্যন্ত মন সর্বদা অস্থির হয়ে থাকে সমাধান খুজে বের করার জন্যে।সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত মনে অশান্তি বিরাজ করে আর সকল চেষ্টা প্রয়োগ করে যখন সমাধানে পৌছাতে ব্যার্থ হয় ঠিক তখনি সে হয়ে যায় হতাশ,আর এই হতাশা থেকেই জন্ম নেয় বিষন্যতা।মানুষের মনের আরেকটা প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে যে সে সকল কাজের মাঝেই একটা প্রাপ্তি খোজে, প্রাপ্তি ছাড়া কিছুতেই সে সন্তুষ্ট না, এটা by default । প্রাপ্তি টা হতেপারে তার বস্তুগত কিছু স্বার্থ্য কিংবা ভাল কিছু করতে পারার মানুষিক প্রশান্তি।আবার মনকে গতিশীল রাখার জন্যে প্রয়োজন আশা নামক একটি Fuel এর।যদি আশা নামক Fuel টি ফুরিয়ে যায় তাহলেও মন স্থির হয়ে পড়বে আর তখনি বিষন্যতা চেপে ধরবে।সাথে আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে মানুষের জীবনে যখন কোনঘটনা ঘটে, তখন সেই ঘটনাটা তার জীবনে ঘটার কারন কি,পাশে দেখা আরেকজনের জীবনে না ঘটে তার জীবনেই কেন ঘটলো বা এই ঘটনায় তার কি লাভ বা ক্ষতি হল আর যদি ক্ষতি হয় তবে তা কিভাবে পুষিয়ে নিতে পারবে সে বা আদো পারবে কিনা, এই বিষয়গুলো তার চিন্তা জগতকে ঘিরে রাখে।প্রশ্নগুলোর সমাধান করতে পারলেমন শান্ত হয় না হলেই অশান্ত এবং হতাশায় আক্রান্ত। এবার চলুন দেখি উপরের ঘটনাগুলোতে তাদের problem এর root টা identify করার চেষ্টা করি। ইভানের ক্ষেত্রে যদি খেয়াল করে দেখেন, সে আসলে তার জানা সকল প্রকার আনন্দ-স্বাধীনতা ভোগ করে ফেলেছে।একি জিনিসে এক ঘেয়েমী(monotonic) চলে আসাটা মানুষের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট আর এর থেকে সে বেরুতে চাইবেই, যখন এর থেকে বেরুনোর কোন পথ সে খুজে পায় না বা খুজে পাবার আশাও থাকে না তখনি সে জীবনের প্রতি হতাশ হয়ে যায়।যেমনটি ঘটেছে ইভানের ক্ষেত্রে।সুমি,মুহিত আর মুসফিকের ঘটনাগুলোর ধরন ভিন্ন হলেও তাদের সমষ্যা মোটামুটি একই আর তা হচ্ছে তাদের জীবনে যা ঘটেছে সেটা তাদের দৃষ্টিতে নিজেদের একটা বড় ধরনের অপুরনীয় ক্ষতি যা কখনো পেছনে ফেরানো সম্ভব নয় আবার মেনেও নিতে পারতেছে না।কারন এই ক্ষতির বিনিময়ে কোন লাভেরআশাও তাদের চোখে পড়ছে না।তাদের কেও সেটা ভাগ্য বলে নিজের মনকে স্বান্তনাদেওয়ার চেষ্টা করলেও মনের দিক থেকে প্রশান্তিতে সেটা মেনে নিতে পারতেছে না।আর তাই বিষন্যতা জেকে বসেছে মনে।মুনিম আর আসাদ সাহেবের সমষ্যা মোটামুটি কিছুটা একি টাইপের,আর তা হচ্ছে তারা যা করছে তার কোণ অর্থ তারা খুজে পাচ্ছে না,অর্থাত জীবনের মানে তাদের কাছে অপরিষ্কার,তাই কিসেরআশায় তারা জীবন কাটাবে এই ভাবনার উত্তর খুজে না পেয়ে তারা বিষন্ন।
Problem তো মোটামুটি identify করা গেলো।এখন প্রশ্ন হচ্ছে এর সমাধান কি করে সম্ভব।সমাধান করার পূর্বে অবশ্যই আমাদেরকে যেটা করতে হবে তা হচ্ছে এই Problem গুলো কেন হচ্ছে সেটা খুজে বের করা।আগেই বলেছি মানুষের সকল কাজের পিছনে যে জিনিসটা কাজ করে সেটা হচ্ছে তার মনের চিন্তা আর মানুষের মন কিভাবে সন্তুষ্ট হয় সেটাও আমরা দেখেছি উপরের আলোচনায়।তাহলে এটা পরিষ্কার যে তাদের চিন্তায় এমন কোন সমষ্য আছে বা এমন কিছুর অভাব আছে যার কারনে সেই চিন্তা তাদের মনকে সন্তুষ্ট করতে ব্যার্থ হচ্ছে।প্রত্যেকের চিন্তার মাঝেই যে বিষয়টি লক্ষ্যনীয় তা হচ্ছে তারা সবাই তাদের প্রপ্তি/অপ্রাপ্তিরEquation টা মেলাচ্ছে এই পৃথিবীতেই।অর্থাৎ পৃথিবীর জীবনের পরের হিসাবটা তারা কেও কেও মিস করে যাচ্ছে আবার কেও সেটা হিসেবেই নিচ্ছেনা, ভাবছে Equation টা বুঝি এখানেই শেষ।মূলত তারা Equation এর Left hand side নিয়েই হিসেব মিলাতে বসে গেছে। তাদের কেও কেও ভুলেই গেছে অথবাবুঝেইনি যে Right hand side টা তারাবসায় নি। তাহলে Equation solve হবে কি করে ?? Equation solve না হলে সমাধান পাবে না আর সমাধান না পেলে তো হতাশ হবেই...এদের মাঝে মুসফিক ভাই Right hand side টাও বসিয়েছেন তবে উনি Left hand side এর কিছু parameter এর বৈশিষ্ট ধরতে ভুল করতেছেন সঠিক চিন্তার অভাবে।তাদের সবাই মোটামুটি এই পৃথিবীর বস্তুগত gain এর মাঝে মনকে সন্তুষ্ট করতে চাইছেন আর সেটাকেই Success হিসেবে চিন্তা করছেন।তাই যখনি এই পৃথিবীতে বস্তুগত Loss হচ্ছে আর তখনি মন অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ছে।আর এখানেই তারা ভুলটা করে বসে আছেন। এবার দেখা যাক Proper Thinking এর মধ্য দিয়ে যে ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহন করেছে সে কিভাবে এই সমষ্যাগুলোর সমাধান করে।Proper Thinking এর মধ্য দিয়ে যে ইসলাম গ্রহন করেছে সে জানে পৃথিবীতে আগমনের পূর্বে সে আল্লাহর নিকট ছিল, মৃত্যুর পরে সে আবার আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবে।মাঝে পৃথিবীর এই সময়টাতে তাকে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষা দেওয়ার জন্যে।আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন,
"এবং অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, খিদে, সম্পদ ও প্রাণের ক্ষতি ও ফল-ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে। এবং সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের (যারা এসব বিপদে ধৈর্যধারণ করে)।" বাকারা-১৫৫
" আল্লাহ যার ভাল চান তাকে বিপদগ্রস্তকরেন। " বুখারি , মিশকাত হাদীস ১৪৫০
পরীক্ষায় পাস করলে জান্নাত আর ফেল করলে জাহান্নাম।পরীক্ষার হলে তার প্রাপ্তি কেবল ভাল Marks এর জন্যে ভাল করে পরীক্ষা দেওয়া,বাকি বস্তুগত যা কিছু সে এখানে ব্যবহার করছে সেগুলো কেবল তার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র।তাই সৃষ্টিকর্তা কাকে কেমন প্রশ্ন দিলেন সেটাকে সে প্রাপ্তি হিসেবে দেখে না, দেখে সেই প্রশ্নের সে সঠিক উত্তর দিয়ে পুরো Marks আদায় করে নিতে পারলো কিনা( মানে সকল কাজের মধ্যে সে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টায় থাকবে আর এর মাধ্যমে জান্নাতলাভের আশা করবে )।মজার ব্যাপার হল প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর বলে দেওয়া আছে, তাকে শুধু সেটা খাতায় তুলতে হবে সেই মতে।এখানে শয়তান ব্যাটা তার মনকেভুলিয়ে-ভালিয়ে প্রশ্নটাকেই তার প্রাপ্তি হিসেবে দেখাতে চাইবে, এখন যে শয়তানের ফাদে পা দিবে সে ধরা খাবে এবং হতাশ হবে আর যে Proper Thinkingকাজে লাগিয়ে আল্লাহর দেয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর তার খাতাতে লিখতে থাকবে সেই হবে Gainer, তাই হতশা তার ধারে কাছেও আসতে পারবে না।ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে "Prevention is better than cure." আর মাশাল্লাহ ইসলাম সেই Prevention টাই দেয় যাতে রোগ হতেই না পারে।এজন্যই আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সূরা ইব্রাহীমে শিক্ষা দিয়েছেন " মুমিন কখনো হতাশ হয় না" ... এবার আসুন দেখি মুসফিক ভাইয়ের বিষয়টাআরো একটু গভীরে গিয়ে, কারন উনি একজন মুসলিম হওয়া সত্বেও কেন এমন বিষন্য হচ্ছেন।কারন তিনি তো প্রশ্নকে প্রশ্ন হিসবেই দেখেন আর উত্তরকে উত্তর হিসেবেই।উনার জন্যে এটা একটা পরীক্ষা উনি সেটা জানেন আর জানেন বলেই তিনি সেটা মেনেও নিয়েছেন এবং পরীক্ষা দিচ্ছেন।কিন্তু মনের প্রশান্তি ( Tranquility ) কেন পাচ্ছেন না ?? ইসলাম পালন করলে তো মনের শান্তি পাওয়ার কথা যেহেতু ইসলামমানে নিজের ইচ্ছাকে স্রষ্টার ইচ্ছার কাছে সমর্পন করে শান্তি অর্জন করা।তাহলে ?? এর মানে কোথাও তার চিন্তাতে একটু ভূল হচ্ছে নিশ্চয়ই।উনি মনে হয় উনার কোন একটা ইচ্ছাকে স্রষ্টার কাছে সমর্পন করতে পারেন নাই, অথবা বুঝতে পারেন নাই কিভাবে সেটা সমর্পন করবেন।ঘটনাটি খেয়াল করে দেখুন, উনার স্ত্রী ধর্ষীত হওয়ার পেছনে তার স্ত্রীর কোন দোষ ছিলনা, তার মানে সে সৃষ্টিকর্তার নিকট পবিত্র, অপবিত্র হচ্ছে সেই নরপশু যে ধর্ষন করেছে। কোন কোন দেহ সেই ধর্ষন প্রক্রিয়ার সম্পৃক্ত ছিল সেটা মূখ্য বিষয় নয় মুখ্য বিষয় কার দোষ ছিল আর কার ছিল না।এখানে এটা দেখার বিষয় না যে আপনার সঙ্গীটিকে আপনি Intact অবস্থায় পেলেন নাকি পেলেন না, মুখ্য বিষয় আপনি তাকে পবিত্র অবস্থায় পাচ্ছেন নাকি পাচ্ছেন না, আর সেই বিচারে আপনার বাকি দ্বায়িত্ব ঠিকমত পালন করছেন কিনা।আপনি যদি এই চিন্তাটা বাদ দিয়ে কেবল দেহের ব্যাপারটা মাথায় আনেন তাহলে খেয়াল করে দেখুন আপনিও এই পৃথিবীতে ভোগের চিন্তা নিয়ে ঘুরছেন,যে ইচ্ছাটা স্রষ্টার কাছে সমর্পন করার কথা ছিল।পৃথিবীতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা তৈরী করা হয়েছে একজনকে আরেকজনের আমানত হিসবে।তাই এখানে খেয়াল করার বিষয় একজন আরেকজনের আমানতঠিক রাখায় ব্যাপারে নিজের দ্বায়িত্বটুকু ঠিকমত পালন করছে কিনা।Ultimate Intact অবস্থায় একজন নারী/পুরুষ কে আরেকজন পুরুষ/নারী আশা করতে পারে কেবল মাত্র বেহেস্তেই ,কারন সেখানে সবকিছু মানুষের ভোগের জন্যে তৈরী করা হয়েছে, পৃথিবীতে নয়।
অবশেষে বের করা গেল বিষন্যতা কেন তৈরী হয় আর খুজে পাওয়া গেল এ থেকে মুক্তির উপায় কি ।কথা হচ্ছে মানুষের চিন্তাতো আর এমনি এমনি গড়ে উঠে না,শয়তানতো সারাক্ষন তার পেছনে লেগেইথাকে তার চিন্তাকে ভূল দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ব্যাস্ত থাকে। তাই সেক্ষেত্রেও কিন্তু আল্লাহ পথ দেখিয়ে দিয়েছেন আর তা হচ্ছে শয়তানে প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্যে আল্লাহর কাছে দোয়া করা সাথে আরও বলে দিয়েছেন যাতে মুমীন ভাইরা মুমীন ভাইদের সাথে বেশী সময় কাটান,আর বন্ধু বা পরামর্শদাতা হিসেবে যেন একজন মুমিন ভাইকেই বেছে নেয়।দেখলেনতো ইসলামের সৌন্দর্য, সে কেবল সমাধানের কথা বলেই ক্ষান্ত হয়ে যায় নি সেটা কিভাবে অর্জন করতে হবে আর ধরে রাখতে হবে সেটাও বলে দিয়েছেন। বর্তমানে চারপাশে একবার চেয়ে দেখুন এই ভোগবাদী সমাজের ফসল কতশত তরুন-তরুনী,বয়োবৃদ্ধ থেকে শুরু করে সকল বয়সের মানুষ বিষন্যতায় ভূগে হয় মাদকে নেসা গ্রস্থ হচ্ছে, কিংবা মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে মানুষিক হসপিটালে বছরের পর বছর পড়ে থাকছে সাথে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের পরিবার পরিজনদের।সরকারকেও খরচ করতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা মানুষিক হস্পিটাল,মাদক নিরাময় কেন্দ্র নির্মান থেক শুরু করে তাদের চিকিৎসারখরচ বহন করতে গিয়ে।এর চাইতেও মারাত্মক ক্ষতি যেটি হচ্ছে তা হল দেশহারাচ্ছে তার সুযোগ্য সন্তানদের যাদের সংগ্রাম করার কথা ছিল দেশের উন্নয়নে আর আজ তারা সংগ্রাম করছে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে।আজ দেশে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা থাকলে মানুষের চিন্তার এই অধপতন হতো না, এতোমানুষিক হস্পিটাল,মাদক নিরাময় কেন্দ্র নির্মান করতে হতো না,এত এত ঔষধের প্রয়োজন পরতো না,স্বজনদের পোহাতে হত না সীমাহীন দূর্ভোগ, হারাতে হতো না আমাদের সুযোগ্য সন্তানদের, আমরা পেতে পারতাম একটা সমৃদ্ধশীল আর উন্নত জাতি।একবার ভেবে দেখুনতো...
BACK TO BANGLA BLOGclick here


1. users are in this post

Pair of Vintage Old School Fru