Old school Swatch Watches
আল ওয়ালা (ভালবাসা, সাহায্য করা, রক্ষা করা, অনুসরণ করা ইত্যাদি) এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে কথা, কাজ ও ঈমানের মধ্যে সামজ্ঞস্য থাকা যা আল্লাহক সন্তুষ্টকরে এবং ঐ সমস্ত মানুষদের সাথে একমতহওয়া যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন৷ 'আল ওয়ালা ওয়াল বারা' এমন একটি বিশ্বাস যা মুসলমানদের সকল কাজ ওকথাকে পরিচালিত করে এবং এটার অনুশীলন ও বাস্তবায়নের উপর মু'মিনদের মর্যাদার স্তরের তারতম্য ঘটে৷ এই বিশ্বাস মুসলিমদের মনমানসিকতার ক্ষেত্রেদ্ব্যর্থহীন হবেযা তার সমস্ত কার্যে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে৷ আল্লাহ তা'আলা তাঁর মু'মিন বান্দাদেরকে কাফেরদের সাথে সমস্ত রকমের সাহায্য সহযোগিতাপ্রদর্শন নিষেধ করেছেন৷ এটা তাদের সাথে স্পষ্ট ভালবাসা ও করুণার সম্পর্ককে অথবা আত্মীয়তার পরিচিতির কারণে তাদের সাথে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতারসম্পর্ককে মজবুত বা শক্তিশালী করে৷ মু'মিনরা আল্লাহর শত্রুদের বন্ধু হতে পারে না এবং আল্লাহর ভালবাসা ও তার শত্রুদের ভালবাসাকে একত্রিত করা একজনমানুষের পক্ষে অসম্ভব কারণ এটা হচ্ছে বিপরীত দুই বস্তু অথবা ব্যাপারের সমন্বয় সাধন; সেজন্য যে আল্লাহকে ভালবাসে, সে অবশ্যই তাঁর (আল্লাহ) শত্রুদেরঘৃণা করবে৷ কাফেরদের পৃষ্ঠপোষকতা করা, সাহায্যকরা এবং মু'মিনদের ত্যাগ করা মুসলিমদের জন্য হারাম৷ ঈমান ও কুফরের যে কোন ব্যাপারে কোনসাহায্য সহযোগিতা অথবা সম্বন্ধ নাই৷ শরীয়তের পরিভাষায় ' আল ওয়ালা ওয়াল বারা ' র সংজ্ঞা 'আল ওয়ালা' (অর্থাৎ ভালবাসা, সমর্থন করা, সাহায্য করা, অনুসরণ): এর শরীয়ী অর্থ হচ্ছে, যে শুধু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে ভালবেসে কথা, কাজ ও বিশ্বাসেসম্পূর্ণ একমত হয়৷ 'আল বারা' (অর্থাৎ ঘৃণা করা, ত্যাগ করা, দূরে থাকা ইত্যাদি): হচ্ছে 'আল-ওয়ালা'র সম্পূর্ণ বিপরীত এবং ঐ সমস্ত সব কিছুর সাথেবিরোধিতা করা, ভিন্নমত পোষণ করা যা আল্লাহ ঘৃণা করেন এবং দোষারোপ করেন৷ 'আল ওয়ালা ওয়াল বারা'র বিশ্বাসের ক্ষেত্রে চারটি বিষয় জড়িত, যথাঃকথা, কাজ, বিশ্বাস এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বগণ৷ কিছু জিনিস যা আল্লাহকে (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা)সন্তুষ্ট করে সেগুলো হচ্ছে- আল্লাহর স্মরণ (যিকির), আল্লাহররাস্তায়জিহাদ করা, আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস করা৷" (আল-ক্বাওয়ায়িদুন-নূরানিয়্যাহ আল-ফিকি্বয়াহ) এবং মু'মিনদের ভালবাসা৷ গীবত, যিনা, শির্ক এবংকুফর হচ্ছে এমন কতগুলো জিনিস যা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) ঘৃণা করেন এবং এগুলো মু'মিনদেরও অবশ্যই ঘৃণা করতে হবে৷ আল ওয়ালা ওয়াল বারা ঈমানের অত্যাবশ্যকীয় অংশ 'ওয়ালা'র উৎস হচ্ছে ভালবাসা এবং 'বারা'র উৎস ঘৃণা; অন্তর এবং কাজ এই দুটি দ্বারাই এটি বাস্তবেপরিণত হয়৷ 'ওয়ালা' অন্তরঙ্গতায়, উদ্বিগ্নতায় এবংসাহায্যের দিকে উৎসাহিত করে৷ 'বারা' বাধা, প্রতিবন্ধকতা, শত্রুতা এবং অস্বীকারকে ইন্ধন যোগায়৷ 'ওয়ালা' এবং 'বারা' দুটোই ঈমানের ঘোষণার সাথেজড়িত এবং এর আবশ্যকীয় মূল সূত্রগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করে৷ কুরআন এবং হাদীস থেকে এর প্রমাণ লক্ষণীয় যা নিম্নোক্ত কিছু আয়াতেউল্লেখ করা হলোঃ " মু ' মিনগণ যেন মু ' মিনগণ ব্যতীত কাফিরদিগকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে৷ যে কেউ এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না ; তবে ব্যতিক্রম , যদি তোমরা তাদের নিকট থেকে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন কর৷ আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন এবং আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন৷ " (সূরা আলি 'ইমরান ৩: ২৮) এবং তিনি বলেনঃ " বল , তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর , আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদর অপরাধ ক্ষমা করবেন৷ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল , পরম দয়ালু৷ বল , আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হও৷ যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখো , আল্লাহ তো কাফিরদেরকে পছন্দ করেন না৷ " ( সূরা আলি ' ইমরান ৩ : ৩১ - ৩২ ) *. আল্লাহ তাঁর শত্রুদের উদ্দেশ্য উল্লেখ করে বলেনঃ " তারা এটাই কামনা করে যে, তারা যেরূপ কুফরী করেছে তোমরাও সেইরূপ কুফরী কর, যাতেতোমরাতাদের সমান হয়ে যাও৷ তাই তোমরা তাদের মধ্যে থেকে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো নাযতক্ষণ না তারা আল্লাহরপথে হিজরত করে৷" (সূরানিসা ৪: ৮৯) এবং তিনি আরও বলেনঃ " হে মু ' মিনগণ ! তোমরা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না , তারা পরষ্পর পরষ্পরের বন্ধু৷ তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন হবে৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ যালিম সমপ্রদায়কে স ৎপ থে পরিচালিত করেন না৷ " ( সূরা মা ' য়িদা ৫ : ৫১ ) " হে মু ' মিনগণ ! তোমরা ঈমানদার ব্যতীত অন্য কাউকেও অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না৷ তারা তোমাদের অনিষ্ট করতে ত্রুটি করবে না ; যা তোমাদেরকে বিপন্ন করে তাই তারা কামনা করে৷ তাদের মুখে বিদ্বেষ প্রকাশ পায় এবং তাদের হৃদয় যা গোপন রাখে তা আরও গুরুতর৷ তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিস্তারিতভাবে বিবৃত করা হলো , যদি তোমরা অনুধাবন কর৷ দেখ , তোমরাই তাদেরকে ভালবাস কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালবাসে না অথচ তোমরা সমস্ত কিতাবে ঈমান রাখ আর তারা যখন তোমাদের সংস্পর্শে আসে তখন বলে , আমরা বিশ্বাস করি ; কিন্তু তারা যখন একান্তে মিলিত হয় তখন তোমাদের প্রতি আক্রোশে তারা নিজেদের আঙ্গুলের অগ্রভাগ দাঁতে কাটতে থাকে৷ বল , ' তোমাদের আক্রোশে তোমরা মর ' ৷ অন্তরে যা রয়েছে সে সম্বদ্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত৷ তোমাদের মঙ্গল হলে তারা তাদেরকে কষ্ট দেয় আর তোমাদের অমঙ্গল হলে তারা এতে আনন্দিত হয়৷ তোমরা যদি ধৈর্যশীল হও এবং মুত্তাকী হও তবে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না৷ তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে রয়েছেন৷ "( সূরা আলি ' ইমরান ৩ : ১১৮ - ১২০ ) আল ওয়ালা ওয়াল বারা বিষয়ে কয়েকটি হাদীস আমরা এই বিষয়ে অনেকগুলো হাদীসের মধ্যে অল্প কয়েকটি হাদীস এবং সাহাবীদের আলোচনা উল্লেখ করবো যেমনঃ জাবির বিন আব্দুলাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুহতে বর্ণিত, ' মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে , প্রত্যেক মুসলমানকে পরামর্শ দেয়ার এবং প্রত্যেক কাফেরকে পরিহার করার শপথ করাতেন৷ ' (মুসনাদ ইমাম আহমদ -৪/৩৫৭-৮)
ইবনে শায়বা বলেন যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ " ঈমানের দৃঢ়তম বন্ধন হলো শুধুমাত্র তাঁরই জন্য ভালবাসা এবং তাঁরই জন্য শত্রুতা৷ " (তাবারানী, আল কবির, ইবনে শায়বা এটা ইবনে মাসউদ থেকে মারফু রূপে বর্ণনা করেছেন এবং এটা হাসান রূপে আখ্যায়িত করেছেন) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ " ঈমানের দৃঢ়তম বন্ধন হচ্ছে আল্লাহর জন্য আনুগত্য এবং তাঁর জন্য বিরোধিতা , আল্লাহর জন্য ভালবাসা এবং তাঁর জন্য শত্রুতা৷ " (আত তাবারানী, আল কাবির৷ সুয়ূতী (রহঃ) এটা তাঁর আলজামি আসসাগীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং আলবানিএটিকে হাসান আখ্যা দিয়েছেন) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেছেন, " যে আল্লাহর জন্য ভালবাসে এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে , এবং যে আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব নষ্ট করে অথবা তার জন্য শত্রুতা ঘোষণা করে , সে আল্লাহর কাছ থেকে নিরাপত্তা পাবে৷ এটা ছাড়া কেউ প্রকৃত ঈমানের স্বাদ পাবে না , যদিও তার সওম ও সালাত অনেক হয়৷ মানুষ দুনিয়াবী বিষয়ে সম্পর্ক গড়ে তোলে , যা তাদেরকে কোন উপকারই করতে পারবে না৷ " (ইবনে রজব আল হাম্বালী,জামি আল উলূমওয়াল হাকিম, পৃঃ৩০) শাঈখ সুলাইমান বিন আব্দুলাহ কর্তৃক_'আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব নষ্ট করা' এই কথাটির ব্যাখ্যায় বলেন যে, এটি আল্লাহর জন্য ভালবাসার ও বিশ্বস্ততারসম্পর্ক গড়েতোলায় আবশ্যকতা নির্দেশ করে, এটাই আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব৷ এটা আরও নির্দেশ করে যে, সাধারণ আবেগ বা অনুভূতি এখানে যথেষ্ট নয়; এখানেযা বুঝানো হয়েছে তা হচ্ছে ভালবাসা মৈত্রীর উপর প্রতিষ্ঠিত৷ এটা সাহায্য,সম্মান এবং ভক্তির অপরিহার্যতা নির্দেশ করে৷ এটার অর্থ তাদের সাথে থাকাযাদেরকে সে কথায় ও কাজে ভালবাসে৷ 'আল্লাহর জন্য শত্রুতা' এটি আল্লাহর জন্য শত্রুতার আবশ্যকতা নির্দেশ করে যা আল্লাহর জন্য বিরোধিতা৷ এটা কাজেরমাধ্যমে তাদের সাথে বিরোধিতা ঘোষণা করা, তাঁর (আল্লাহর) শত্রুদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করা,তাদেরকে পরিত্যাগ করা এবংকথা ও কাজের মাধ্যমে তাদেরথেকে দূরে থাকা৷ এটাপ্রমাণ করে যে, সাধারণ বিরোধিতা যথেষ্ট নয় এবং এটা তোমার প্রতিশ্রতির প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন, কারণ আল্লাহ বলেনঃ "তোমাদেরজন্য ইব্রাহীম (আঃ) ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ৷ যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তেযার ইবাদত কর তাদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই৷ আমরা তোমাদেরকে মানি না৷ তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালেরজন্য; যদি না তোমরা এক আল্লাহতে ঈমান আন৷" (সূরা মুমতাহিনা ৬০: ৪) এই সব হলো আমাদের এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাব যে , আল্লাহর আনুগত্যের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে আল্লাহকে ভালবাসা এবং তাঁর দ্বীনের সাহায্যে এগিয়ে আসা;তাদেরকে ভালবাসা যারা তাঁর (আল্লাহর) প্রতি আনুগত্যপরায়ণ এবং তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা৷ আল্লাহর জন্য বিরোধিতা হচ্ছে আল্লাহর শত্রুদেরব্যপারে ক্রোধান্বিত হওয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা, এই কারণে আল্লাহ প্রথম দলটিকে 'আল্লাহর দল'এবং দ্বিতীয় দলটিকে 'শয়তানের দল'বলেছেনঃ"যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান৷ আর যারা কুফরী করেতাগুত তাদের অভিভাবক, এরা তাদেরকে আলো হতে অন্ধকারেনিয়ে যায়৷ এরাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে৷" (সূরা বাকারা ২:২৫৭) এবং আল্লাহ বলেনঃ " যারা মু'মিন তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে৷ সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধেযুদ্ধ কর; শয়তানের কৌশল অবশ্যই দুর্বল৷" (সূরা নিসা ৪: ৭৬) এটা সুবিদিত যে, যখনই আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য সাধনার্থে কোন নবী প্রেরণ করেছেন , তখনই তাদের ( নবীদের ) বিরুদ্ধাচরণকারীদেরও তিনি ( আল্লাহ ) প্রস্তুত করেছেন৷ *. আল্লাহ বলেনঃ "এইভাবেই আমি মানুষ ও জিনের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছি, প্রতারণার উদ্দেশ্যে তাদের একে অন্যকে চমকপ্রদ বাক্যদ্বারা প্ররোচিত করে৷ যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করতেন তবে তারা এসব করতো না; সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তাদের মিথ্যা রচনাকে বর্জন কর৷" (সূরা আন'আম ৬: ১১২) হতে পারে যে, এই সমস্ত ঐশী বাক্যের বিরুদ্ধাচরণকারীরা অহীর কিছু অংশ আয়ত্ত করেছে এবং সাথে কিছু প্রমাণাদিও আছে৷ *. যেমন আল্লাহ বলেনঃ"তাদের নিকট যখন স্পষ্টনিদর্শনসহ তাদের রাসূল আসতেন তখন তারা নিজেদেরজ্ঞানের দম্ভ করত৷ তারাযা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপকরত তাই তাদেরকেবেষ্টন করবে৷" (সূরা মু'মিন ৪০: ৮৩) প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আল্লাহর দ্বীন শিক্ষা করাআবশ্যকীয় যা তার জন্য একটি মারণাস্ত্র হিসাবে শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে সংগ্রামকরতে সাহায্য করবে৷ এটাতে তার কোন ভয় ও আশংকা থাকবে না,যেহেতু শয়তানের কৌশল সব সময় দুর্বল৷ আল্লাহ বলেনঃ " অবশ্যই আমার বাহিনীই বিজয়ী৷ " (সূরা সাফ্ফাত ৩৭: ১৭৩) আল্লাহর সাহায্যকারীদের বিজয় হতে পারে কথাবার্তায়, বিতর্কে, তেমনি যুদ্ধ ও শত্রুতায়৷এইভাবে এক ইলাহর দল থেকে একজনসাধারণ মানুষও কাফেরদের হাজারও জ্ঞানীদের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারে (কাশফ আশ-সুবুহাত, আব্দুল ওহ্হাব, তৃতীয় সংস্করণ-পৃঃ ২০) বর্তমান সময়ে কুরআনও সুন্নাহ থেকে পরিষ্কার যে, আনুগত্য হচ্ছে কালেমার (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)দাবী৷ যেহেতু এটা হচ্ছে কালেমার প্রকৃতঅর্থেও অপরিহার্য অংশ৷ ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেছেন,"ঈমানের ঘোষণা- 'নাই কোন ইলাহ, ইবাদত যোগ্য আল্লাহ ছাড়া'- এর দাবী হচ্ছে তুমি শুধু আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসবে,কাউকে শুধু আল্লাহর জন্য ঘৃণা করবে, নিজেরা বন্ধুত্ব করবে আল্লাহর জন্য, কারও সাথে শত্রুতা ঘোষণা করবে শুধু আল্লাহর জন্য; এর দাবী হচ্ছে তুমিভালবাসবে যা আল্লাহ ভালবাসেন, তুমি ঘৃণা করবে যা আল্লাহ ঘৃণা করেন" (ইবনে তাইমিয়্যাহ,আল-ইহ্তিজাল ফিল ক্বদর, পৃঃ ৬২) আল ওয়ালা ওয়াল বারা ' য় বিশ্বাসের মর্যাদা ইসলামী আক্বীদায় 'আল-ওয়ালা ওয়াল বারা'য় বিশ্বাস একটি উচ্চ মর্যাদা দখল করে আছে ৷এটি নিম্নলিখিত কারণগুলো হতে বুঝা যেতে পারেঃ এরএকটি অংশ যেমনঃ"কোন ইলাহ নেই" যা হলো"আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই"-এর অংশ৷ যাতে বুঝায়ঃ আল্লাহ ছাড়া যে সবকিছুর ইবাদত করা হয় সে সবহতে মুক্ত এবং নিরাপদ থাকা৷ সর্বশক্তিমান আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেনঃ "আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে কোন না কোন রাসূল পাঠিয়েছি, এই নির্দেশপ্রচারের জন্য যে,তোমরা কেবল মাত্র আল্লাহরইবাদত কর এবং তাগুত থেকে দূরে থাক...৷" (সূরা নাহল ১৬: ৩৬) 'আল-ওয়ালা ওয়াল বারা' অন্যতম প্রধান আক্বীদা যা হচ্ছে ঈমানের সবচেয়ে দৃঢ়তম বন্ধন ৷আল-বাররাবিন আজিব রাদিয়াল্লাহু আনহুহতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ 'আল্লাহর জন্য ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা হচ্ছে ঈমানের সবচেয়েদৃঢ় বন্ধন৷' (আহমাদ) এটা হচ্ছে এমন একটা ভিত্তি যেটার দ্বারা অন্তর ঈমানের সৌন্দর্য্য এবং পরম আশ্বস্ততা অনুভব করে৷ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ " যারই নিম্ন লিখিত তিনটি গুণ থাকবে সে ঈমানের মাধূর্য লাভ করবেঃ ( ১ ) তার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অন্য যেকোন কিছুর তুলনায় অধিক প্রিয় হবে৷ ( ২ ) যে একজনকে ভালবাসে এবং তাকে ভালবাসে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য৷ ( ৩ ) এবং সে কুফরীতে ফেরত যাওয়াকে এমনভাবে ঘৃণা করে যেমন সে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে ঘৃণা করে৷ " ( সহীহ্ বুখারী , মুসলিম ) এটা হচ্ছে বুনিয়াদ যেটারউপর মুসলিম সমপ্রদায়ের সমস্ত সম্বন্ধ এবং আদান-প্রদান নির্ভর করে, যেমন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেনঃ"তোমাদের ঈমান নাই যতক্ষণসে নিজের জন্য যা পছন্দ করে তা তার ভাই (মুসলিম) এর জন্য পছন্দ করে৷" (বুখারী) এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেনঃ " মু ' মিনগণ পরস্পর ভাই ভাই ছাড়া আর কিছু নয় ; সুতরাং তোমরা ভ্রাতৃগণের মধ্যে শান্তি স্থাপন কর আর আল্লাহকে ভয় কর যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও৷ " ( সূরা হুজুরাত ৪৯ : ১০ ) তাদের জন্য অনেক বড় ও অফুরন্ত পুরস্কার রয়েছে যাদের বৈশিষ্ট হচ্ছে, তারা যখন কাউকে ভালবাসে শুধু আল্লাহর জন্যই ভালবাসে৷ নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে বলেছেনঃ "যারা আমাকে ভালবাসে তারা কিয়ামতের দিন একটি নূরের মিম্বরের উপর দাড়াবে৷" তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ"সাত প্রকারের লোক যাদেরকে আল্লাহ তাঁর ছায়ার নিচে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না৷তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে, যারা আল্লাহর জন্য একে অন্যকে ভালবাসত, তারা আল্লাহর জন্য মিলিত হত এবং আল্লাহর জন্য বিচ্ছিন্ন হত৷" সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধন বা সম্পর্ক যা মানুষের মধ্যে পরস্পর বন্ধন তৈরী করে৷ আল্লাহ তা'আলা এটাকে সব ধরনের বন্ধনেরউপর প্রাধান্য দিয়ে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেনঃ " বল , তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ , তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয় তোমাদের পিতা , তোমাদের সন্তান , তোমাদের স্ত্রী , তোমাদের আত্মীয় - স্বজন , তোমাদের অর্জিত সম্পদ , তোমাদের ব্যবসা - বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালবাস , তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত৷ আল্লাহ সত্যত্যাগী সমপ্রদায়কে স ৎপ থ প্রদর্শন করেন না৷ " ( সূরা তওবা ৯ : ২৪ ) 'আল-ওয়ালা ওয়াল বারা' আক্বীদা হচ্ছে আল্লাহর 'ওয়ালাহ (আত্মরক্ষা, ক্ষমতা, কতৃত্ব, রাজত্ব) পাবার একটি মাধ্যম৷ ইবনে জারীর ইবনেআব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেনঃ "যে আল্লাহর জন্য ভালবাসে এবংআল্লাহর জন্য ঘৃণা করে যে আল্লাহর জন্য 'মুয়ালাত' (সাহায্য করা, সমর্থনকরা) করে এবং আল্লাহর জন্য শত্রুতা পোষণ করে, সে আল্লাহর 'ওয়ালায়াহ' অর্জন করবে৷" আল ওয়ালা ওয়াল বা ' রার সম্পর্ক কেয়ামতের দিনেও থাকবে যা আল্লাহ সর্বজ্ঞাতা আমাদের পূর্বেই জানিয়েছেনঃ " যারা অনুসৃত হয়েছে - তারা যখন অনুসারীদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে তখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে এবং তাদের সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে৷ " ( সূরা বাকারা ২ : ১৬৬ ) যে আল্লাহ ও তাঁর দ্বীন ছাড়া অন্য কিছুকে ভালবাসে এবং তাকে (আল্লাহ),তার দ্বীনকে অথবা তার অনুসারীদের ঘৃণাকরে, সে নিশ্চিত কাফের৷ আল্লাহ তা'আলাবলেনঃ "হে মু'মিনগণ! তোমরা ইহুদীও খৃষ্টাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবেনা, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু৷" তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে'আল-ওয়ালা ওয়াল বারা' হচ্ছে ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এর পূর্ণতার জন্য এটি প্রয়োজনীয়৷ একটি হাদীসে রয়েছেঃ "যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যভালবাসে, আল্লাহরসন্তুষ্টির জন্য ঘৃণাকরে আল্লাহর জন্য দান করে এবং আল্লাহর জন্য (দান করা হতে) বিরত থাকে, ঐ ব্যক্তি তার ঈমানকেপরিপূর্ণ করেছে৷ " (আহমাদ ও তিরমিযী, হাসান হাদীস)
HTML Comment Box is loading comments...